ফেসবুক মার্কেটিং এর ১০ টি ভুল

Maksud Rifat

July 20, 2023

 জেনে নিন ফেসবুক মার্কেটিং (Facebook Marketing) এর ১০ টি মারাত্মক ভুল এবং এই ভুল  থেকে বেঁচে থাকার উপায়। 

স্বীকার করার উপায় নেই যে, বর্তমানে ফেসবুক হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। বর্তমানে ফেসবুকে ২.৯৬৩ বিলিয়ন (2.963 billion)  এক্টিভ ইউজার রয়েছে যা সময়ের সাথে বৃদ্ধি পেয়েই যাচ্ছে। তাই নতুন বিজনেস অথবা প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সকলেরই প্রয়োজন পরে পণ্যের মার্কেটিং এর। আর ফেসবুকেই রয়েছে পণ্যের মার্কেটিং করার সুবর্ণ সুযোগ। 

তবে, ফেসবুকে মার্কেটিং করা কি এতোই সহজ?

উত্তর হলো, না। 

ফেসবুকে মার্কেটিং করে সফলতার গল্প যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি ব্যর্থতার গল্পও কিন্তু কম নয়। 

ফেসবুক মার্কেটিংয়ের ভুল হতে পারে আপনার ক্যারিয়ার ধ্বংসের অন্যতম কারণ। 

আসুন, জেনে নেই ফেসবুক মার্কেটিং এর ১০ টি মারাত্মক ভুল এবং এই ভুল থেকে বাঁচার উপায়।

১৷   টার্গেট অডিয়েন্ড রিসার্চ না করা (Ignoring Research About Target Audience):

ফেসবুকে একটি বিজনেস পেইজ খোলা যততা সহজ, টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে বিজনেস পেইজের প্রচারণা বা পৌঁছে দেওয়া ততটা সহজ নাও হতে পারে। ফেসবুকে পণ্যের প্রচারণা শুরুর আগে অবশ্যই টার্গেট অডিয়েন্সের ব্যাপারে যথেষ্ট রিসার্চ করে নিতে হবে। বড় বড় কোম্পানিগুলোর দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, তারা প্রতিনিয়ত টার্গেট অডিয়েন্সের মনস্তত্ত্ব, চাহিদা, আকাঙ্খা ইত্যাদিতে বুঝার চেষ্টা করে এবং রিসার্চ করে।  এটা মার্কেটিং এর অন্যতম প্রয়োজনীয় কাজ৷ তাই, যে কোনো প্রোডাক্ট এর প্রচারণা যদি ফেসবুক বিজনেস পেইজের মাধ্যমে করতে চান, তাহলে আপনাকে আগেই টার্গেট অডিয়েন্স সিলেক্ট করতে হবে। আপনি টার্গেট অডিয়েন্স এর কি কি চাহিদা পূরণ করতে পারবেন, টার্গেট অডিয়েন্স কি কি সুবিধা চায়, তাদের বয়স কত, তাদের পেশা কি ইত্যাদি সম্পর্কে যথেষ্ট রিসার্চ করে নিতে হবে। নয়তো পণ্যের প্রচারণা সঠিক অডিয়েন্স কাছে পৌঁছাবে  না আর আপনার ব্যবসায় হবে বড় ধরনের লস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২৷ কন্টেন্টের কোয়ালিটির উপর নজর না রাখা। (Unconscious About Content Quality) 

অনেকেই ফেসবুকে বিজনেস পেইজের প্রচারনার উপর যথেষ্ট  সক্রিয় থাকে। শুধুমাত্র নিয়মিত পোস্ট দিলেই মার্কেটিং হয়ে যাবে?  টার্গেট অডিয়েন্সের রুচি বুঝতে পারা জরুরি। পন্যের মার্কেটিং এর কন্টেন্ট হতে হবে অডিয়েন্সের রুচি অনুযায়ী। লিখিত কন্টেন্ট, ইমেজ এবং ভিডিও হতে হবে মানসম্মত। মানসম্মত  না হলে তা অডিয়েন্সের অপছন্দের তালিকায় চলে যাবে। তাই, কন্টেন্ট কোয়ালিটির উপর বিশেষভাবে নজরদারি করতে হবে এবং কিভাবে কন্টেন্ট প্রতিনিয়ত ভালো করা যায় তা সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। 

ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং এর ভিডিওগুলো দেখে নিতে পারেন।

৩।  প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রচারণা (Additional Promotion As Needed) :

অনেকেই বিজনেস পেইজ খোলার পর একের পর এক পোস্ট দিতেই থাকেন। মনে করেন যে, যত বেশি পোস্ট দিবে তত বেশি প্রচারণা হবে। এটা একদমই ভুল ধারনা। বরং, এটা পন্যের নেগেটিভ মার্কেটিং তৈরি করে। প্রচারণার সময় অবশ্যই টার্গেট অডিয়েন্সের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট করা উচিত। অবশ্যই কোম্পানির সফলতা, প্রোডাক্টের বিবরণ ইত্যাদি প্রচার করতে হবে, তবে তা যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার সাথে। একটি বিজনেস পেইজের পন্যের থেকে অবশ্যই কাস্টমারের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক। তাই, প্রচারণা যদি তাদের আশা পূরণে ব্যর্থ হয় তবে ফলোয়ারের সংখ্যা কমে যাবে সহজেই। 


লোগো ডিজাইনের ১৫ টি টিপস জানুন


৪। অসম্পূর্ণ এবং ভুল তথ্য দেওয়া( Giving Incomplete And False Information)  :

ব্যবসার জন্য ফেসবুক পেইজ ( Facebook Page ) পরিচালনার ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তা বজায় রাখাটা জরুরি৷ অনেক সময় অনেকেই পণ্যের ডিটেইলস সম্পূর্ণভাবে জানায় না। এতে, করে কাস্টমারটা পন্য বা প্রডাক্ট সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে ব্যার্থ হয়। যার ফলে পেইজ থেকে পণ্য ক্রয়ের আগ্রহ একদমই হারিয়ে ফেলে। এছাড়া, অনেকেই পণ্যের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে দেন। এতে সাময়িক সময়ের জন্য মার্কেটিং ভালো হলেও, দীর্ঘ মেয়াদি সময়ের জন্য ক্ষতিকর। ভুল তথ্যের জন্য কাস্টমার ক্ষতিগ্রস্ত হলে, পেইজ এবং প্রোডাক্ট নিয়ে তাদের নেগেটিভ ধারনা তৈরি হবে। ফলস্বরূপ, পেইজের ফলোয়ার এবং কাস্টমার দুটোই হারাতে পারেন। তাই, দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পণ্যের কোয়ালিটি বজায় রেখে সঠিক এবং সম্পূর্ণ তথ্য দিতে হবে। 

৫। পোস্ট দীর্ঘায়িত করা(Writing Long Post):

অবশ্যই পণ্যের প্রচারনায় লিখিত কন্টেন্ট জরুরি। লিখিত কন্টেন্ট, কাস্টমারের  বিশ্বস্ততা অর্জনে যথেষ্ট সহায়তা করে। তবে, পোস্টের লিখা যদি দীর্ঘ হয় তাহলে কাস্টমার পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কারণ, তারা অতিরিক্ত সময় ব্যায় করতে আগ্রহী নয়। তাই, ছোটো ছোটো পোস্ট লেখার চেষ্টা করতে হবে। অল্প কথাতেই বেশি বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় বিষয় লিখা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। গবেষণা মিডিয়া Forbes এর তথ্য মতে, ২৫০ টি অক্ষরের পোস্ট সবচেয়ে বেশি পঠিত এবং শেয়ার হয়। 

Green, Blue আর Purple কালারকে cool কালার বলে।কালার হুইল এর যেই পাশে এই কালারগুলো আছে সেইপারে এই কালারগুলোর মধ্যবর্তী কালারগুলোও   cool color এর অন্তর্ভুক্ত। 

৬। অন্যকে কপি করার মানসিকতা(Copying Other’s Activists):

অনেকেই নিজেরা চেষ্টা করে unique  মার্কেটিং আইডিয়া বের করতে চান না। অন্য কোনো পেইজ বা প্রতিষ্ঠান কিভাবে কি করতেছে, সেটাই কপি করার চেষ্টা করেন। এতে কোনো উপকার তো হয়ই না, বরং ক্ষতির পরিমাণই বেশি। কেউ কেউ তো অন্যের পোস্টের লিখা, লোগো, ইমেজ ইত্যাদি এদিক সেদিক করে কপি/পেস্ট করে থাকেন৷  এতে কোম্পানিটি নিজস্বতা থাকে না।  তাই, নিজের কোম্পানির পন্যের জন্য পোস্ট, ইমেজ ইত্যাদি নিজেদেরই তৈরি করতে হবে এবং সেটা যেন অন্যদের থেকে আলাদা(unique) হয়, সেটা খেয়াল রাখা জরুরি।

৭। ফেসবুক এ্যালগরিদমকে পাত্তা না দেওয়া(Neglecting Facebook Algorithms):

একটি প্রতিষ্ঠানের পেইজ সফল ভাবে চালাতে হলে এবং প্রতিনিয়ত ইম্প্রুভ(improve) করতে হলে, ফেসবুক এ্যালগরিদম নিয়ে আপডেটেড থাকতে হবে। ফেসবুক প্রায়ই এ্যালগরিদম পরিবর্তন করে থাকে। তাই, এ্যালগরিদম নিয়ে রেগুলার রিসার্চ করতে হবে। তবে এ্যালগরিদম  পরিবর্তিত হলেও, কিছু ব্যাসিক রুলস(basic rules) অনুসরণ করলে পেইজের প্রচারণা সহজেই টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে সহজেই পৌঁছানো যায়। তাই, এগুলো রিসার্চ করে সেই অনুযায়ী  পেইজের মাধ্যমে পন্যের মার্কেটিং করতে হবে।

৮। অনিয়মিত পোস্ট করা(Irregular Posts)

অনেক বিজনেস পেইজেরই দেখা যায়, অনেকদিন পন্যের প্রচারণায় পোস্ট দিচ্ছে, তারপর সপ্তাহ খানিকের জন্য গায়েব(Disappearing)। এভাবে, অনিয়মিত পোস্ট দেওয়া মার্কেটিং এর জন্য ভালো কৌশল(Tactic) নয়। এতে করে ফলোয়ারের সংখ্যা কমে যায়। তাই, নিদিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে প্রতিনিয়ত(regular)  পোস্ট দিতে হবে। এতে পেইজটি এক্টিভ থাকবে এবং নতুন ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। তবে অতিরিক্ত পোস্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে কাস্টমাররা বিরক্ত হয়ে আনফলো করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে, টেকনিক অবলম্বন করতে হবে, যাতে অডিয়েন্স সবসময় পেইজের সাথে কানেক্টেড থাকতে পারে। 

৯। বারবার একই তথ্য পোস্ট দেওয়া (Publishing ‍Similar Information) :

টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে পেইজকে আকর্ষনীয় করে তুলে ধরতে, একই তথ্য বারবার (Don’t rewrite much) দিতে থাকলে, অডিয়েন্স বিরক্তি(boring) অনুভব করবে। তাই, পোস্টে লেখা, ইমেজ, ভিডিও ইত্যাদি দিয়ে বৈচিত্রতা(variety) তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে, পরিকল্পনা তৈরি করে নেওয়া যেতে পরে। কোন দিনে, কোন সপ্তাহে কিভাবে এবং কি নিয়ে পোস্ট করা যায়, সেটা পরিকল্পনা করে নিয়ে সহজেই কাস্টমারের মনে জায়গা করে নেওয়া যায়। 

১০। নেগেটিভ ফিডব্যাক বিবেচনায় না রাখা(Ignoring Negative Feedback):

যারা পেইজ পরিচালনা (Page Manage) করেন, তাদের অনেকেই অডিয়েন্সের নেগেটিভ কমেন্টকে ডিলিট করেন অথবা এড়িয়ে চলেন। এমনটা করা একদমই ঠিক নয়। নেগেটিভ কমেন্টকে বিবেচনায় নিতে হবে। টার্গের অডিয়েন্স কেনো কমপ্লেইন(Complain) করছেন, তাদের চাহিদা আসলে কি, কোন বিষয়টি তাদের মনঃক্ষুণ্নের কারণ হচ্ছে এগুলো নিয়ে যাচাই-বাছাই করতে হবে। এটি কাস্টমারের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতার পরিচয়। তারপর, দ্রুত সমস্যা  সমাধান করে দিতে হবে।

ফেসবুক মার্কেটিং করে কাস্টমার ধরে রাখা একই সাথে সংবেদনশীল এবং চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তাই,যতটা সম্ভব ভুল এড়িয়ে চলাই উত্তম। তাই,ফেসবুকে মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে  অবশ্যই সতর্ক থাকতে  হবে। কোনো কাজে সফলতা ধরে রাখতে হলে অবশ্যই সচেষ্ট থাকা উচিত। আর ফেসবুক মার্কেটিং এর ভুল করলে আপনার বিফলতা নিশ্চিত সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। 

0 Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Related

১৫ টি কার্যকরী পদ্ধতির মাধ্যমে ফেসবুকে অর্গানিক রিচ বাড়ান

১৫ টি কার্যকরী পদ্ধতির মাধ্যমে ফেসবুকে অর্গানিক রিচ বাড়ান

আপনাকে যদি প্রশ্ন করি, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সোশাল মিডিয়া কোনটি? আপনি  বলবেন, " আরেহ, ফেসবুক! ফেসবুকের কোনো বিকল্প আছে...

read more
ফেসবুকে সেলস বাড়াতে ১০টি কৌশল অবলম্বন করুন

ফেসবুকে সেলস বাড়াতে ১০টি কৌশল অবলম্বন করুন

সেলস কমে যাচ্ছে? কি করবেন ভাবছেন? এই সমস্যা অনেকের আছে। কিন্তু সমাধান খুজে পাচ্ছে না। তাদেরকে বলছি আপনি যদি ফেসবুকে সেলস বাড়াতে চান তাহলে এই ১০টি...

read more

Pin It on Pinterest

Share This

Share This

Share this post with your friends!